মঙ্গলবার ১১ নভেম্বর ২০২৫ - ১৯:০১

হাওজা নিউজ এজেন্সি: গতরাতে ইসফাহানের খোমেইনিশহরের মাহদিয়ায় আয়োজিত ফাতেমিয়্যার শোকানুষ্ঠানে “হযরত ফাতিমা (সা.আ.)-এর জীবনধারা ও সীরাত” শীর্ষক আলোচনায় তিনি বলেন, হযরত সিদ্দিকায়ে তাহেরা (সা.আ.)-এর জীবন ও আচরণের বহু দিক আজকের জীবনে সরাসরি প্রয়োগযোগ্য। এই জীবনধারাকে বাস্তবে রূপ দিতে না পারলে পশ্চিমা সমাজ যে ধরণের পরিবারবিমুখ মডেল তৈরি করছে তা শেষ পর্যন্ত পরিবারের ভাঙন ও সমাজের অবক্ষয়ের দিকে নিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, পশ্চিমা পরিবারব্যবস্থার ক্ষতিগুলো আজ পরিসংখ্যানেই প্রকাশ্য—বিবাহ কমছে, তালাক বাড়ছে, সন্তান জন্মদানের হার নাটকীয়ভাবে কমে গেছে। পশ্চিমা গবেষক উইলিয়াম গার্ডনারের “A War Against the Family” বইয়েও স্বীকৃত হয়েছে যে পশ্চিমা জগতে পরিবারব্যবস্থার বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক আক্রমণ চালু রয়েছে।

ড. রাফিয়ি কুরআনুল কারিমে পরিবার সম্পর্কে নাজিল হওয়া আয়াতগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন যে পরিবার হলো প্রশান্তি, স্বস্তি ও নিরাপত্তার আশ্রয়। ইসলামে বিবাহের মতো সুন্দর আর কোনো প্রতিষ্ঠান নেই।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, হযরত ফাতিমা (সা.আ.)-এর পরিবারকে আল্লাহ তাআলা বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন, কারণ তাদের সম্পর্কে তাতহীর, মুবাহিলা, মাওয়াদ্দাত এবং হাল আতা’র মতো আয়াত নাজিল হয়েছে। এই পরিবার তাই মানবসমাজে এক অনন্য এবং অনুসরণযোগ্য আদর্শ।

ড. রাফিয়ি বলেন, হযরত ফাতিমা (সা.আ.)-এর গৃহে যেমন কিছু করণীয় ছিল, তেমনি কিছু বর্জনীয় বিষয়ও ছিল যা পরিবারকে সুসংগঠিত রাখার জন্য অপরিহার্য। এসব মিলিয়ে প্রায় ৫০টি নির্দেশনা রয়েছে।

তিনি পরিবার দৃঢ় করার নীতিগুলো ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, সীরাতে ফাতেমিয়া অনুসারে প্রথম নীতি হলো ভালোবাসা। এই ভালোবাসার অভাব সন্তান-বিদ্রোহ, দূরত্ব ও নারীর প্রতি অবিচারের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

তিনি বলেন, ফাতেমী জীবনধারার আরেকটি নীতি হলো কাজের সুষম বণ্টন এবং স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সহযোগিতা। এর পাশাপাশি লজ্জাশীলতা, পারিবারিক মর্যাদা রক্ষা এবং স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানদের মাঝে শালীন দূরত্ব বজায় রাখাও জরুরি।

ড. রাফিয়ি জানান, সরল জীবনযাপন, আড়ম্বর ও ভোগবিলাস থেকে দূরে থাকা, গভীর ধর্মীয়তা, কঠিন সময়ে ধৈর্য ধারণ এবং একে অপরের প্রতি সহমর্মিতা—এসবই ফাতেমী সীরাতের মূল অংশ।

তিনি বলেন, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ, পারস্পরিক সম্মান, ক্ষমাশীলতা, রাগ-বিদ্বেষ বর্জন এবং ভুলের উত্তরে ক্ষমা করা—এগুলো পরিবারকে দৃঢ় করে রাখে।

ড. রাফিয়ি উল্লেখ করেন যে প্রতিটি বিষয়ের যেমন কল্যাণ রয়েছে তেমনি রয়েছে ক্ষতির আশঙ্কা। প্রকৃত বুদ্ধিমান সেই যে উভয় দিক ভালোভাবে চিনে।

তিনি পরিবার ভাঙনের কারণগুলোর কথাও তুলে ধরেন: স্বামী-স্ত্রীকে অন্যের সঙ্গে তুলনা করা, রুক্ষ ভাষা ব্যবহার, অযথা দাবি-দাওয়া, দায়িত্বহীনতা, উপকারের পরিবর্তে মনোমালিন্য সৃষ্টি, পরিবর্তন-লালসা, মিথ্যাচার ও বিশ্বাসঘাতকতা—এসব পরিবার ধ্বংসের প্রধান কারণ।

শেষে তিনি হযরত ফাতিমা (সা.আ.)-এর একটি বাণী উল্লেখ করেন যেখানে তিনি আমিরুল মুমিনীন আলী (আ.)-কে বলেছিলেন, “আমাদের দাম্পত্য জীবনে তিনটি জিনিস ছিল না: মিথ্যা, খিয়ানত এবং অবাধ্যতা।”

ড. রাফিয়ি বলেন, আজ বহু পরিবার ঠিক এই তিনটি কারণে ভেঙে পড়ছে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha